দু'বছর পর বেকসুর খালাস, জেল থেকে ছাড়া পাবেন উমর খালিদরা?
Delhi Riot 2020: দিল্লির আদালত ইতিমধ্যেই উমর খালিদদের বেকসুর ঘোষণা করে দিয়েছে। তারপরও অবশ্য জেলে থাকতে হবে এই ছাত্রনেতাদের।।
২০২০-র ১৩ সেপ্টেম্বরের পর কেটে গিয়েছে দু’বছর। বারবার আদালতে জামিনের আবেদন করেও লাভ হয়নি। তবে এবার খানিকটা স্বস্তি পেলেন উমর খালিদ। ৩ ডিসেম্বর দিল্লির করকরদুমা আদালত প্রাক্তন ছাত্রনেতা খালিদকে বেকসুর খালাস হিসেবে ঘোষণা করেছে। সেইসঙ্গে আরও এক প্রাক্তন ছাত্রনেতা খালিদ সইফিকেও বেকসুর ঘোষণা করেছেন বিচারক। ২০২০ দিল্লি দাঙ্গার সময় পাথর ছোঁড়ার মামলায় এই রায় দেওয়া হল বলে জানা গিয়েছে। এরপরই এই রায়কে ‘সংবিধানের জয়’ বলেছেন খালিদ সইফির স্ত্রী নার্গিস সইফি। অবশ্য বেকসুর খালাস হলেও এখনও জেলেই থাকতে হবে উমর এবং সইফিকে। তাঁদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ আইনে রুজু করা মামলার এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। তাই এখনই জেল থেকে মুক্তি পাবেন না এই দুই প্রাক্তন ছাত্রনেতা।
এই সুযোগে আরও একবার চোখ ফেরানো যাক ২০২০-র ফেব্রুয়ারির দিকে। কী হয়েছিল ওইদিন দিল্লিতে? ওই সময় গোটা দেশজুড়ে চলছিল এনআরসি ও সিএএ বিরোধী আন্দোলন। কলকাতা থেকে দিল্লি – নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন অনেকেই। সেই সময় ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে শুরু হয় বিপুল গণ্ডগোল। একদিকে সিএএ আইনকে সমর্থনকারী, অন্যদিকে এই আইনের বিরোধী – এই দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সেই সংঘর্ষই বদলে যায় হিন্দু মুসলিম দাঙ্গায়। ২২ ফেব্রুয়ারি জাফরাবাদ মেট্রো স্টেশনের বাইরে প্রায় ১০০০ প্রতিবাদী মানুষ এসে জড়ো হন। সেই দলে মহিলারাও ছিলেন। এর জেরে সিলামপুর, জাফরাবাদ, মৌজপুরের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। পরের দিন দুপুর নাগাদ ভারতীয় জনতা পার্টির নেতা কপিল মিশ্রা তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে মৌজপুরের দিকে রওনা দেন। উদ্দেশ্য ছিল ‘সবক শেখানোর’। তারপরই পরিস্থিতি ভয়ংকর হয়ে ওঠে বলে অভিযোগ। কারাওয়াল নগর, মৌজপুর চক, বাবরপুরের মতো বেশ কিছু জায়গায় শুরু হয় পাথর বৃষ্টি। সেইসঙ্গে শুরু হয় গাড়ি জ্বালানো, দোকান ভাঙচুর।
আরও পড়ুন : প্রাপ্য শুধুই সহমর্মিতা! উমরের মুক্তি চেয়ে কি আদৌ জোট বাঁধবে দেশ?
এর পরের দিন, ২৪ ফেব্রুয়ারি পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠে। মুখ ঢেকে, হাতে তরোয়াল নিয়ে হামলা চালায় একদল লোক। শুরু হয় দাঙ্গা। হিন্দু ও মুসলিম – উভয় পক্ষেরই ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যা বাড়তে থাকে লাফিয়ে লাফিয়ে। উত্তর-পূর্ব দিল্লির চারটে মসজিদে তাণ্ডব চালানো হয়। আশঙ্কায়, ভয়ে অনেকে ঘর থেকেও পালিয়ে যান। তাঁরা পরবর্তী অনেকগুলো দিন নিজের এলাকায় ফিরতে সাহস পাননি। গেরুয়া ও ‘জয় শ্রী রাম’-এর দাপটের মধ্যেই সিলিন্ডার বিস্ফোরণ করা হয়। এই পুরো ঘটনায় পুলিসের ভূমিকাও বড়সড় সমালোচনার মুখে পড়ে। দিনের শেষে হিসেবে দেখা যায়, দাঙ্গায় ৫৩ জন মারা গিয়েছেন। আহত হয়েছেন ২০০-রও বেশি।
সেই সময়ই দিল্লির খাজুরি খাস থানায় জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র উমর খালিদ, খালিদ সইফি সহ আরও কয়েকজনের নামে এফআইআর দায়ের করা হয়। একজন কনস্টেবল বলেন, চাঁদ বাগ পুলিয়ায় একদল উন্মত্ত জনতা পাথর ছুঁড়তে শুরু করেছিল। তারপর দোকান ভেঙে, আশেপাশের মানুষদের মারধোর করে গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। বলা হয়, এই ঘটনায় উমর খালিদদের প্ররোচনা রয়েছে। পাশাপাশি দিল্লির এই দাঙ্গায়ও এই ছাত্রনেতাদের হাত রয়েছে বলে দাবি করে বিজেপি ও হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলি। তার ভিত্তিতেই তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। মোট ২২০০ জনকে এই দাঙ্গায় গ্রেফতার করা হয় বলে জানা গিয়েছিল।
আরও পড়ুন : বিচারের আগেই মিডিয়া যে ভাবে ‘অপরাধী’ বানিয়েছে উমর খলিদকে
২০২০-র দিল্লির হিংসা ঠিক কী ছিল? সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা? নাকি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদ রুখতে ‘সবক শেখানো’? এই প্রশ্ন বারবার তোলা হয়েছে। শাহিনবাগ ও সিএএ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন এই উমর খালিদ। সেজন্যই কি তাঁকে দু’বছর ধরে তিহার জেলের ওপারে থাকতে হচ্ছে? দিল্লির এই করকরদুমা আদালতই অক্টোবরে খালিদদের জামিনের আবেদন খারিজ করে। বিচারক জানিয়েছেন, এই মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়ে গিয়েছে। তাই অন্যান্য অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করা অবধি উমর খালিদদের জেলে বন্দি করে রাখা চলবে না। অবশ্য ইউএপিএ-র গেরোয় এখনও তাঁরা জেলে।