৫ সিকে পয়সার বিনিময়ে অভিনয় শুরু, পরবর্তী জীবনে কত পারিশ্রমিক ছিল উত্তম কুমারের?
Uttam Kumar Fees: শোনা যায়, চলচ্চিত্র থেকে উপার্জন করা সমস্ত টাকাই উত্তম কুমার ফের চলচ্চিত্রেই বিনিয়োগ করেছিলেন।
বাঙালি তাঁকে 'মহানায়ক' নামে ডেকেছে। তাঁর হাসি, তাঁর ঢেউ খেলানো চুলের গড়িয়ে পড়া, তাকানো, বাঙালিয়ানার টইটম্বুর উদযাপন সবটাই বাঙালি সেই কোন কাল থেকেই অনুকরণ করতে চেয়েছে। বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগে এই অভিনেতাই ছিলেন খনি থেকে তুলে আনা সেই আশ্চর্য হিরকখণ্ড যার দিকে তাকালে অন্ধত্ব নেমে আসবে জেনেও চোখ ফেরানো যায় না। উত্তম কুমার পর্দায় মানেই প্রেক্ষাগৃহ পরিপূর্ণ। পর্দায় যে নায়িকার সঙ্গেই জুটি বাঁধুন না কেন, মনে মনে সমস্ত কিশোরী-যুবতীরাই উত্তম কুমারের নিজস্ব নায়িকা হয়ে উঠতে চেয়েছেন, যুবকরা আপ্রাণ চেয়েছেন তাঁদের প্রেয়সীর 'উত্তম কুমার' হয়ে উঠতে। আসলে একালের ডায়লগ ধার করে বলতে হয়, উত্তম কুমার নিজেই 'ইন্ডাস্ট্রি'। উত্তম কুমার শুধুই অভিনেতা নন, উত্তম কুমার তারকা। যে তারকা নিজস্ব দীপ্তিতে ভাস্বর করে রেখেছেন বাংলা চলচ্চিত্র জগতের আসমানকে।
তারকা বলে শুধু যে উত্তম কুমারের অভিনয় নিয়ে মাতামাতি হয়েছে এমন নয়। উত্তম কুমারের যাপন, খাদ্যাভ্যাস, ফ্যাশন, ব্যক্তিগত প্রেম, সম্পর্ক, রোম্যান্স নিয়ে চলেছে নিরন্তর চর্চা। সেই সময়ের প্রেক্ষিতে নির্দ্বিধায় বলা যায়, উত্তম কুমারের অভিজাত যাপন ধরা পড় তাঁর সমস্ত ব্যক্তিত্বেই। আর পেশার ক্ষেত্রেও উত্তম একমেবাদ্বিতীয়ম! ছবি হিট করাতে হলে উত্তম কুমারকে চাই, ছবি হিট করাতে উত্তম সুচিত্রার জুটিকে পর্দায় চাই! আর এই অনন্ত চাওয়ার বদলে কী পেতেন মহানায়ক? মানুষের ভালোবাসা, অগাধ সমাদর তো বটেই, মহানায়কের আর্থিক পারিশ্রমিকের পরিমাণও ছিল তাক লাগানো। সিনেমার অন্য সমস্ত খরচের কথা পরে, আগে প্রযোজকদের মাথায় রাখতে হতো মহানায়কের পারিশ্রমিক। এক একটা সিনেমায় অভিনয়ের জন্য কত পারিশ্রমিক নিতেন মহানায়ক?
আরও পড়ুন- মাত্র দেড়শো টাকা আর চূড়ান্ত অপমান! সেই মহালয়া উত্তমের কাছে ছিল অভিশাপের মতো
শোনা যায়, সেই সময়ে এক একটি সিনেমার জন্য আনুমানিক আড়াই থেকে তিন লক্ষ টাকা পারিশ্রমিক নিতেন উত্তম কুমার। সেই স্বর্ণযুগে আড়াই, তিন লক্ষ টাকা আসলে কতখানি ভারী অঙ্কের তা বুঝতে সমস্যা হয় না। অন্য নায়ক নায়িকাদের তুলনায় উত্তম কুমারের পারিশ্রমিক ছিল একেবারেই ভিন্ন। টাকার অঙ্কে মহানায়কের ধারে কাছে কেউ ছিলেন না। তবে শোনা যায়, শেষের দিকে পারিশ্রমিকের পরিমাণটা বদলে যায় মহানায়কের।
আরও পড়ুন- কেন নিজের নাম রেখেছিলেন উত্তমকুমার? আত্মজীবনীতে উত্তর দিয়েছিলেন মহানায়ক
প্রথম অভিনয়ের সুযোগ আসে ১৯৪৭ সালে। তাঁরই বাড়ির ভাড়াটে গণেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাধ্যমে ভোলানাথ আঢ্যের ‘মায়াডোর’ নামের একটি হিন্দি সিনেমায় ছোট্ট একটা চরিত্র পান অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়। দৈনিক পাঁচ সিকি পারিশ্রমিকে পাঁচ দিন অভিনয় করেন। কিন্তু এই ‘মায়াডোর’ সিনেমাটি মুক্তি পায়নি। দ্বিতীয় সুযোগ পরের বছরই। ১৯৪৮ সালে মুক্তি পেয়েছিল উত্তম অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘দৃষ্টিদান’। তবে সেই সিনেমায় উত্তম কুমার (তখনও তিনি অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়) ছিলেন শিশুশিল্পী, নায়কের ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয়। পারিশ্রমিক সাড়ে ১৩ টাকা। ওই বছরের মাঝামাঝি সময়ে তিনি কাজ শুরু করলেন নবেন্দুসুন্দর বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত ‘কামনা’ ছায়াছবিতে। এবার নায়কের ভূমিকায়। পারিশ্রমিক দেড় হাজার টাকা! ১৯৪৯ সালে মুক্তি পেল ‘কামনা’। কিন্তু সুপার ফ্লপ। এরপর আরও টানা প্রায় ৫টি সিনেমা ফ্লপ হয় উত্তম কুমারের।
১৯৫১ সালে নামটাই বদলে ফেললেন তিনি। অরুণ কুমার থেকে হয়ে উঠলেন উত্তম কুমার। অভিনয়ে উত্তমের প্রথম সাফল্য নির্মল দে পরিচালিত ‘বসু পরিবার’ সিনেমায়। উত্তম কুমারের জীবনের প্রথম হিট ছবি সেটিই। এরপরেই নির্মল দে আরও একটি সিনেমা করেন উত্তম কুমারকে মুখ্য ভূমিকায় রেখে, নাম ‘সাড়ে চুয়াত্তর’। ব্যাস! আর পায় কে! উত্তম কুমার তখন বাংলা সিনেমার সেরা মুখ! একটার পর একটা সিনেমায় পরিচালক-প্রযোজকরা চাইছেন তাঁকে। চাহিদার সঙ্গে তাল রেখে বাড়তে থাকে মহানায়কের পারিশ্রমিক।
সেই সময়ের আড়াই তিন লক্ষ টাকা মানে এই সময়ের প্রেক্ষিতে সেই টাকার মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৯৫ লক্ষ টাকা। তবে শোনা যায়, চলচ্চিত্র থেকে উপার্জন করা সমস্ত টাকাই উত্তম কুমার ফের চলচ্চিত্রেই বিনিয়োগ করেছিলেন। তবে, চলচ্চিত্র প্রযোজনার ক্ষেত্রে খুব একটা সফল হননি মহানায়ক। নিজের পারিশ্রমিক বিপুল হলেও, মহানায়ক বহুবার নিজের পারিশ্রমিকের সঙ্গে সমঝোতাও করেছেন। তাঁকে দিতে গিয়ে প্রযোজকের পকেটে টান, অবস্থা এমন যে টাকা জোগাড় না হওয়ায় সিনেমার কাজই বন্ধের মুখে। শোনা যায়, নিজের পকেট থেকেই টাকা দিয়ে সমস্যা মিটিয়ে দিতেন উত্তম কুমার।