বিশেষ অতিথি চা-ওয়ালা, রিক্সাচালক! এবারের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ যে যে কারণে আলাদা

74th Republic Day Parade India : এবারের ২৬ জানুয়ারিতে এমন কিছু থাকবে, যা এর আগে কখনও থাকেনি। এসবের জন্যই প্রজাতন্ত্র দিবস একটু বেশিই ‘স্পেশাল’।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৬ তম জন্মজয়ন্তী পেরিয়ে গিয়েছে। আর হাতে গোনা কয়েকটি ঘণ্টা। তারপরই গোটা ভারত মেতে উঠবে ৭৪ তম প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনে। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারির দিনটিতেই তৈরি হয়েছিল দেশের সংবিধান। স্বাধীন একটি দেশ তখন সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। সেই দিনটিকেই সাধারণতন্ত্র বা প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

এই দিনটিতে কলকাতার রেড রোড তো বটেই, গোটা দেশেই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান হয়। ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লির রাজপথে আয়োজিত হয় প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ। যেটা দেখার জন্য সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ব্যাটেলিয়ন ও স্পেশাল ফোর্স এই কুচকাওয়াজে সামিল হন। সেইসঙ্গে প্রতিটি রাজ্যের বিশেষ ট্যাবলয়েড আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে থাকে। এতদিন ধরে সেটাই হয়ে এসেছে রীতি। কিন্তু ২০২৩-এর ৭৪ তম প্রজাতন্ত্র দিবস একটু হলেও ব্যতিক্রম হতে চলেছে। এবারের ২৬ জানুয়ারিতে এমন কিছু থাকবে, যা এর আগে কখনও থাকেনি। এসবের জন্যই এবারের প্রজাতন্ত্র দিবস একটু বেশিই ‘স্পেশাল’। কেন? তার কারণগুলো জেনে নেওয়া যাক…

আরও পড়ুন : এবার টিকিট কাটলেই সরাসরি দেখতে পাবেন প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ! কী করে?

১) কর্তব্য পথ : এতদিন প্রজাতত্ন্র দিবসের কুচকাওয়াজ হতো নতুন দিল্লির ঐতিহাসিক রাজপথে। সেখানে উপস্থিত থাকেন দেশের প্রধানমন্ত্রী সহ অন্যান্য মন্ত্রীরা। সঙ্গে থাকেন বিশেষ অতিথি, মন্ত্রী-রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের পরিবার এবং সাধারণ মানুষ। এবারও তার অন্যথা হবে না। কিন্তু ২০২২৫ সালেই রাজধানীর সেই ‘রাজপথ’-এর নাম পরিবর্তন হয়েছে। এখন এই ঐতিহাসিক রাস্তাটির নাম ‘কর্তব্য পথ’। তাই ২০২৩-এই প্রথমবার রাজপথের জায়গায় কর্তব্য পথে কুচকাওয়াজ হবে। রাস্তা একই আছে, নামটুকুই কেবল বদলেছে।

২) বিমানবাহিনীর বিশেষ ফোর্স : ভারতীয় বিমান বাহিনীর অন্যতম অঙ্গ হল ‘গরুড় স্পেশাল ফোর্স’। ৭৪ তম প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রথমবার এই বিশেষ বাহিনী সেনার কুচকাওয়াজে অংশ নিতে চলেছে। স্কোয়াড্রন লিডার পি এস জয়তাওয়াত গরুড় বাহিনীকে নেতৃত্ব দেবেন। স্কোয়াড্রন লিডার সিন্ধু রেড্ডি হবেন কমান্ডার।

৩) দর্শকাসনের সংখ্যা হ্রাস : ২০২০-র করোনা মহামারীর আগে অবধি প্রজাতন্ত্র দিবসে দর্শকাসন ছিল ১.২৫ লাখ। কোভিডের পর সেই সংখ্যা এখন কমেছে। এই বছর আগের থেকে ৬৪ শতাংশ আসন সংখ্যা কমানো হয়েছে। মাত্র ৪৫,০০০ মানুষ সরাসরি কুচকাওয়াজ দেখতে পারবেন। এর মধ্যে ৩২,০০০ আসন সাধারণ মানুষের জন্য রাখা হয়েছে। এই প্রথমবার অনলাইনে সরকারিভাবে আমন্ত্রণ পত্র পাঠানো হবে।

আরও পড়ুন : রাজ‍্যের সঙ্গে বন্ধুত্বের পথে নতুন রাজ‍্যপাল? ধনখড়ের থেকে কতটা আলাদা সিভি আনন্দ বোস

৪) প্রথমবার ইজিপ্ট : বিদেশের সেনাবাহিনী হিসেবে ইজিপ্টের সেনারা ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে হাঁটবেন। এই প্রথমবার ইজিপ্টের সেনারা এখানে অংশ নেবেন। সেইসঙ্গে ইজিপ্টের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতাহ এল-সিসি প্রজাতন্ত্র দিবসেরে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

৫) বিশেষ অতিথি চা-ওয়ালা, রিক্সাচালক : ভিভিআইপি ছাড়াও ১০০০ জন ‘বিশেষ আমন্ত্রিত’ মানুষরাও থাকবেন। তাঁদের কেউ কেউ কর্তব্য পথ মেরামতের সময় শ্রমিকের কাজ করেছেন, কেউ সবজি, দুধ বিক্রেতা, কেউ রিক্সাচালক। কেউ আবার কেন্দ্রের সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রোজেক্টে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করেছেন। এই মানুষদেরও প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

৬) মেড ইন ইন্ডিয়া : এই বছর কুচকাওয়াজে ভারতীয় সেনাবাহিনীর যে অস্ত্রগুলি প্রদর্শিত হবে, সেগুলি ভারতেই তৈরি করা হয়েছে। কোনওটাই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়নি। কেন্দ্রের ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা করা হয়েছে।

৭) ভারতীয় নৌবাহিনীর বিশেষ এয়ারক্রাফট আইএল-৩৮ (IL-38) প্রথমবার প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে অংশ নেবে। সেনাবাহিনী সূত্রে জানা গিয়েছে, হয়তো এটাই শেষবার এয়ারক্রাফটটিকে কুচকাওয়াজে জনসমক্ষে আনা হবে। প্রায় ৪২ বছর ধরে সেনাবাহিনীর অঙ্গ হয়ে থেকেছে IL-38। তবে কেবল এটি নয়, আরও ৫০টি এয়ারক্রাফট এবারের প্রজাতন্ত্র দিবসের বিশেষ কুচকাওয়াজে অংশ নেবে বলে জানা গিয়েছে।

More Articles