সাপের বিষ দিয়ে কেন নেশা করেন মাদকাসক্তরা? বিজ্ঞান যা বলছে

Snake Bite Addiction : সাপের বিষ আপনার রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করলে এটি সেরোটোনিন, ব্র্যাডিকিনিন এবং অন্যান্য আরও কিছু রাসায়নিক পদার্থ নির্গত করে

নেশার জন্য কতদূর যেতে পারে মানুষ? বা বলা যেতে পারে, নেশা মানুষকে কতদূর নিয়ে যেতে পারে। কী যে বিচিত্র নেশা রয়েছে পৃথিবীতে, মানুষ কী কী ভাবে সেই নেশার সন্ধান করে তা নিজেই এক মহাকাব্য প্রায়! সম্প্রতি নয়ডা পুলিশ একটি রেভ পার্টিতে হানা দিয়েছিল। সেখানে তখন সমস্ত নেশা ও নেশাপ্রেমীরাই হাজির। মদ, গাঁজা, হেরোইনের ঊর্ধ্বে সেখানে তখন অন্য এক নেশার মাতন! সাপের বিষ ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে OTT রিয়েলিটি শো 'বিগ বস'-এর বিজয়ী এলভিশ যাদব সহ ছয়জনের বিরুদ্ধে। সাপের বিষ দিয়ে নেশা করা নতুন কিছু না। এমনিতে সাপ কামড়ে তাতে বিষ ঢেলে দিলে তা প্রাণঘাতীও হতে পারে কিছুক্ষেত্রে। কিন্তু সাপের বিষ দিয়ে নেশা করা নেশাপ্রেমীদের কাছে এক 'টার্গেট'। সাপের বিষে আসলে কেমন নেশা হয়? সাপের বিষে কী এমন থাকে যা দিয়ে নেশা করা সম্ভব?

নয়ডা পুলিশ এক ব্যাঙ্কোয়েট হল থেকে পাঁচটি কোবরা সহ নয়টি সাপ উদ্ধার করে। যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল তাঁদের কাছ থেকে প্রায় ২০ মিলি সাপের বিষও উদ্ধার করা হয়। এই সাপের বিষ কতটা শক্তিশালী? কীভাবে বিশ্বব্যাপী সাপের বিষ ব্যবহার করে মানুষজন নেশা করেন?

সাপের বিষ দিয়ে কতটা নেশা হয়?

যারা সাইকোঅ্যাকটিভ হওয়ার জন্য মানে, ভালো রকমের নেশা করার জন্য প্রাণীর দেহাংশ অংশ বা পণ্য ব্যবহার করেন তাদের বলা হয় সাইকোনটস। বিজ্ঞান বলছে, সাপের বিষ খেলে কিন্তু মদের নেশার মতো নেশা হয় না। অ্যালকোহলের নেশার থেকে এই নেশা পৃথক। তবে এটি স্নায়ুতন্ত্র এবং অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলির উপর প্রভাব ফেলে। তাই নেশা হলে যা যা হতে পারে তেমন অনেক উপসর্গই দেখা দিতে পারে।

বিষের মধ্যে থাকা নিউরোটক্সিন থেকেই এই নেশা ভাবের জন্ম। এই নিউরোটক্সিন নিউরোট্রান্সমিশনকে প্রভাবিত করে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এই নেশার প্রভাব ৬ থেকে ৭ দিনের জন্য থাকে।

আরও পড়ুন- সাপ কি সত্যিই সাপের মাংস খায়? অভাবনীয় দৃশ্য বদলে দেবে মানুষের বোঝাপড়া

সাপের বিষ বা ভেনম আসলে কী করে?

মাদকাসক্তরা প্রথমে বিষের প্রভাবকে শক্তিশালী করার জন্য সাপকে রাসায়নিক দিয়ে ইনজেকশন দেয়। এর পরে জিভ বা ঠোঁটে সাপকে দিয়ে কামড়ায়। বিষের নিউরোটক্সিনগুলি স্নায়ুতন্ত্রকে লক্ষ্য করে এবং স্নায়ু সংকেত পাঠানোর বিষয়টিকে আস্তে আস্তে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। যার ফলে পেশির দুর্বলতা, অসাড়তা দেখা দেয় এবং মানসিক অবস্থা বদলাতে শুরু করে।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন প্রকাশিত ২০১৪ সালের একটি গবেষণাপত্র বলছে, ভারতে মাদকাসক্তরা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেন নাজা নাজা (কোবরা), বুঙ্গারুস কেরিয়াস (সাধারণ সাপ), এবং ওফিওড্রিস ভার্নালিস (সবুজ সাপ)। গবেষকরা দেখেছেন, সাপের বিষ দিয়ে যারা নেশা করেন তাদের যে অভিজ্ঞতা হয়, তা নিকোটিনের নেশার মতো একই পথ দিয়েই আসে।

গবেষকরা বলছেন, সাপের বিষ মাসক্যারিনিক রিসেপ্টরগুলিতে প্রভাব ফেলে, যা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি এবং শেখার মতো শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ ফিজিওলজি অ্যান্ড ফার্মাকোলজিতে প্রকাশিত ২০২১ সালের এক গবেষণা বলছে, ৬০ শতাংশ সাপের কামড়ই শুষ্ক। গবেষকরা দেখেছেন, কোবরার বিষের সাইকোট্রপিক বৈশিষ্ট্যগুলি মরফিনের কাজের সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায়।

গবেষণা বলছে, সাপের বিষ আপনার রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করলে এটি সেরোটোনিন, ব্র্যাডিকিনিন এবং অন্যান্য আরও কিছু রাসায়নিক পদার্থ নির্গত করে যা ধীরে ধীরে কাজ করে। এই রাসায়নিকগুলির মধ্যে কিছু কিছু আপনার মনের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। ঘুমিয়ে পড়া বা শান্ত বোধ করার অনুভূতি আসতে পারে দ্রুতই। এই 'ইউফোরিক এফেক্ট' মানুষ চান নিজের বাস্তবতা থেকে বেরিয়ে এক অনিয়ন্ত্রিত মানসিক অবস্থান পেতেই। তবে কেন এই বিষ মানুষকে প্রাণে মেরে ফেলছে না তা নিয়ে গবেষণার অভাব রয়েছে এখনও। বিজ্ঞানীরা এখনও পুরোপুরি বুঝতে পারছেন না কেন বিষের নিউরোটক্সিক প্রভাব মানুষের মৃত্যু ঘটাচ্ছে না।

 

More Articles