যে কোনও স্থানে মাত্র ১২০ সেকেন্ডে গভীর ঘুমাতে পারেন আপনি এই মিলিটারি কৌশলে, কীভাবে?
Military Sleeping Technique: এমনকী কফি খাওয়ার পরেও, কানের কাছে মেশিনগান চললেও এই ঘুম সম্ভব।
অনুশাসন। সর্বং সহা শরীরকে চাইলে এই অনুশাসনেই বশে রাখতে পারে মানুষ। তারপর চাইলেই তাকে দিয়ে ঘটিয়ে ফেলতে পারে দুর্ধর্ষ সব কার্যকলাপ। সাধারণ মানুষ যা করতে নাজেহাল, এই অনুশাসকরা হেলায় সেসব করে তাক লাগিয়ে ফেলেন। তবে কোনও কিছুই সহজসাধ্য না। দীর্ঘদিনের কঠিন অনুশীলনে শরীরের জৈবিক ক্রিয়ার উপর অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ পাওয়া সম্ভব। যেমন পেয়েছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। চরমতম পরিস্থিতিতে আদিম জীবের মতো টিকে থাকতে গেলে কী কী ভাবে নিজের দেহ মনকে প্রস্তুত করতে হয় তা জানেন তারা। তাঁদের খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে প্রকৃতির চরম অবস্থানে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার কৌশল, একইসঙ্গে শত্রুর দিকে নজর ও নিজের নিরাপত্তা সবটুকুই মাথায় রেখে কীভাবে শরীরকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় তা সাধারণ মানুষের কাছে কৌতূহলের। সাধারণ মানুষ ঘুমহীনতায় ভুগছে, পর্যাপ্ত ঘুম নেই, চেষ্টা করেও ঘুম আসে না। অথচ চাইলে মাত্র দুই মিনিটের মধ্যে যে কোনও জায়গায় ঘুমিয়ে পড়তে পারেন আপনি। শরীরকে চার্জ করার এই মিলিটারি কৌশলের জন্য অবশ্য প্রয়োজন অনুশীলন, দীর্ঘ অনুশীলন।
এই যেখানে খুশি ২ মিনিটে ঘুমিয়ে পড়ার কৌশলটি মূলত ফাইটার পাইলটদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল, যাদের কাছে ঘুম অত্যন্ত প্রয়োজন মনোসংযোগের জন্য। এই ২ মিনিটে ঘুমের কৌশলটিতে সৈন্যরা যে কোনও সময় এবং যে কোনও জায়গায় ঘুমিয়ে পড়তে পারেন, এমনকী যুদ্ধক্ষেত্রেও। কীভাবে সম্ভব এমন চরম পরিস্থিতিতে, শব্দে আলোতে, বিপদের মাঝে গভীর ঘুমিয়ে পড়া? এই মিলিটারি কৌশলের মূল রহস্য লুকিয়ে আছে দেহেই। আমাদের পেশিগুলিকে আলগা করতে পারলেই এই ঘুম সম্ভব। প্রশিক্ষকরা বলছেন, শুরুটা করতে হবে কপাল দিয়ে। কপালের পেশিগুলি শিথিল করতে হবে সবার আগে।
আরও পড়ুন- বেশি অথবা কম ঘুম দুইই কাল হতে পারে শরীরের! জানেন সুস্থ থাকতে কোন বয়সে কতটা ঘুম জরুরি?
ধীরে ধীরে চোখ, গাল, চোয়াল শিথিল করার পর এবং শ্বাস প্রশ্বাসের উপর লক্ষ্য রাখতে হবে। তারপর ঘাড় এবং কাঁধ আলগা করে দিতে হবে। কাঁধে যাতে কোনও রকমের চাপ না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। কাঁধ যতটা সম্ভব নীচে নামিয়ে, আঙুল সহ দুই হাত শরীরের দু'পাশে আলগা করে ছেড়ে দিতে হবে। মনে মনে ভাবুন, একটা উষ্ণ স্রোত আপনার মাথা শুরু করে আঙুলের ডগা পর্যন্ত ছড়িয়ে যাচ্ছে।
গভীরভাবে শ্বাস নিতে হবে এবং ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়তে হবে। এই করতে করতেই আপনার বুক, পেট, উরু, হাঁটু এবং পায়ের ডগা পর্যন্ত সারাটা শরীর শিথিল করতে হবে। এই মুহূর্তে, যে কোনও রকমের চাপ মন থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। এই কাজটি শুনতে যতই সহজ মনে হোক না কেন, আদতে কী বীভৎস কঠিন তা কল্পনাতীত। কেউ যুদ্ধক্ষেত্রে আছেন, অথচ নিজেকে সমস্ত চাপ থেকে মুক্ত করে ফেলতে পারছেন- এমনটা কীভাবে হতে পারে? এটি করার একটি সহজ কৌশল হলো কল্পনা। মানুষের মন সবচেয়ে বড় অস্ত্র। যদি ওই মুহূর্তে নিজেকে ভাবাতে পারেন যে আসলে আপনি পরিষ্কার আকাশের নিচে, শান্ত হ্রদের পাশে শুয়ে আছেন, পাহাড়ের কোলে সবুজের মধ্যে শুয়ে আছেন, অথবা অন্ধকার ঘরে কালো মখমলের নরম বিছানায় শুয়ে আছেন, দেখবেন চারপাশের চরম অবস্থা ফিকে হয়ে আসছে।
আরও পড়ুন- ঘুমোতে দেয় না যুদ্ধের স্মৃতি, বিরল রোগে দীর্ঘ ৬০ বছর একটানা জেগে ভিয়েতনামের বৃদ্ধ
যদি এই করতে করতে কয়েক লহমার জন্য বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন, ভুলভাল চিন্তা ঢুকে পড়ে ফের, মনে মনে ১০ সেকেন্ড বলুন, আমি এসব ভাবছি না, ভাববই না। বারেবারে বলতে বলতে আগের শান্ত অবস্থায় ফিরে আসতে পারবেন আবার।
এই কৌশলটি মূলত রিল্যাক্স অ্যান্ড উইন: চ্যাম্পিয়নশিপ পারফরম্যান্স নামের একটি বই থেকে নেওয়া। ১৯৮১ সালে প্রকাশিত হয়েছিল এই বই। পরে অবশ্য এই নিয়ে নানা নিবন্ধই প্রকাশিত হয়। টানা ছয় সপ্তাহের অনুশীলনের পর, ৯৬ শতাংশ পাইলট দুই মিনিট বা তারও কম সময়ে ঘুমিয়ে পড়তে পারেন। এমনকী কফি খাওয়ার পরেও, কানের কাছে মেশিনগান চললেও এই ঘুম সম্ভব। যদিও পরীক্ষায় পাইলটদের চেয়ারে সোজা হয়ে বসে ঘুমাতে বলা হয়েছিল, তবে বিছানাতেও একই কাজ করা সম্ভব।