মেসি হোক বা পেনাল্টি, ফেসবুকেই বিশ্বকাপ খেললেন তসলিমা

FIFA World Cup 2022 : প্রত্যেকেই ফুটবলের উত্তাপে গা সেঁকছেন। তসলিমা নাসরিনও সেই আবহেই আছেন। বলা ভালো, একটু বেশিই আছেন।

বিশ্বকাপ তখন একটু একটু করে নিজের রঙ ছড়াতে শুরু করেছে। প্রতিটি দলেরই গ্রুপ স্তরের শেষ ম্যাচ বাকি। সেরকমই ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল আর্জেন্টিনা আর পোল্যান্ড। একদিকে মেসি, অন্যদিকে লিওয়ানডস্কি। সেই ম্যাচেই ৩৮ মিনিটের মাথায় এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। বিতর্কিত হলেও, আখেরে তো পেনাল্টি! কিন্তু সেই মারণ শটই মিস করেন লিওনেল মেসি। বাঁচিয়ে দেন পোল্যান্ডের গোলরক্ষক সেজনি।

যদিও সেই ম্যাচটি আর্জেন্টিনা জিতে শেষ ১৬-এ চলে যায়। কিন্তু প্রসঙ্গ সেটা নয়। মেসি পেনাল্টি মিস করার পরই সকলের চোখ চলে যায় ফেসবুকের দেওয়ালে। একটি বিশেষ পোস্ট তখন অধিকাংশের প্রোফাইলে ঘুরছে। উত্তর, পাল্টা জবাব, শেয়ার, স্ক্রিনশটের হিড়িক লেগে যায়। সেখানে বলা হয়েছে, পোস্টদাতা যদি ওই পেনাল্টি মারতেন, তাহলে নিশ্চিত গোল হতো। মেসির পেনাল্টি মিস নিয়েও বেশকিছু কথা লেখেন তিনি। তারপরই যেন আগুনে ঘি পড়ে। আর্জেন্টিনা ভক্তরাও ছেড়ে কথা বলেননি। বিশ্বকাপের বাজারে ফের এই পোস্টদাতা রীতিমতো ভাইরাল হয়ে গেলেন। ‘ফের’ কেন? কারণ, পোস্টদাতার নাম তসলিমা নাসরিন…

আরও পড়ুন : বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলছেন না মেসি? অনুশীলনে অনুপস্থিতি বাড়াচ্ছে জল্পনা

বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে যাঁদের পরিচয়, তাঁদের তসলিমা নাসরিনের নাম নতুন করে মনে করিয়ে দিতে হবে না। তবে তার বাইরেও দুই বাংলার বহু মানুষ ‘দ্বিখণ্ডিত’, ‘লজ্জা’, ‘নিষিদ্ধ’-এর লেখিকাকে চেনেন। তাঁর লেখাকে অনেকেই কাছে টেনে নিয়েছেন, নিজের বলে মনে করেছেন। তাঁর ধারালো কলম যেমন পেয়েছে পাঠকের ভালোবাসা, তেমনই পেয়েছে তিরস্কারও। মুক্তচিন্তা, নারীবাদ, লিঙ্গসাম্যের সমর্থক; পাশাপাশি ধর্মীয় ঘেরাটোপ, কুসংস্কারের বিরোধিতাও করেছেন তিনি। মৌলবাদী, ধর্মীয় গুরুদের কাছে সেটাই তাঁর ‘অপরাধ’। ১৯৯৪ সালে নিজের জন্মভূমি বাংলাদেশ থেকে তিনি নির্বাসিতা। তাঁর মাথার দামও ধার্য করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে সেই সময় থেকেই খবরের পাতায় জায়গা করে নিয়েছেন তসলিমা।

কিন্তু এবার তিনি অন্য মেজাজে। কেন? বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু হওয়ার পর প্রত্যেকের চোখই কাতারের দিকে। কেউ মেসির দিকে, কেউ ব্রাজিলের সাম্বা শিল্পে ঝুঁকে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পর্তুগাল, এমবাপে গ্রিয়াজমানদের ফ্রান্সও কম যায় না। সেলেব্রিটি হন না সাধারণ মধ্যবিত্ত, প্রত্যেকেই ফুটবলের উত্তাপে গা সেঁকছেন। তসলিমা নাসরিনও সেই আবহেই আছেন। বলা ভালো, একটু বেশিই আছেন।

আরও পড়ুন : মেসি না এমবাপে, শেষ হাসি কার? ফাইনালের আগে রক্তচাপ বাড়ছে ফুটবল বিশ্বের

প্রায় প্রতিটি সময়ই বিশ্বকাপের ম্যাচ নিয়ে তাঁর কোনও না কোনও মন্তব্য ভেসে আসে। সেটা আর্জেন্টিনা হোক, মেসি হোক বা ব্রাজিল। প্রতিটা ক্ষেত্রেই তাঁর মন্তব্যের ‘তীব্রতা’ শোরগোল ফেলছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। শুরু হচ্ছে তর্ক বিতর্ক। কেবল পোল্যান্ড ম্যাচেই নয়, আর্জেন্টিনার সেমি ফাইনাল ম্যাচ নিয়েও পোস্ট করেন তিনি। সেই ম্যাচেও পেনাল্টি শট নেন মেসি। গোলও করেন। বাতিস্তুতাকে ছাপিয়ে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ গোলদাতাও হন। তারপরই সোশ্যাল মিডিয়ার ঘণ্টা বেজে উঠল। তসলিমা নাসরিনের পোস্ট; সেখানে লেখা, পেনাল্টি গোল খুব একটা কৃতিত্বের নয়। ব্যস, সঙ্গে সঙ্গে শুরু যুক্তি প্রতিযুক্তি…

আরও পড়ুন : ফাইনালের আগেই বেঞ্জেমার ‘ভূত’ দেখছে আর্জেন্টিনা? যে চিন্তায় ঘুম উড়েছে মেসিদের

পেনাল্টি মিসের পর নেটিজেনদের বক্তব্য ছিল, সেরা খেলোয়াড়রাও মিস করেন। পেনাল্টিও মিস হতেই পারে। বাংলাদেশের বহু মানুষ আর্জেন্টিনার ভক্ত। তসলিমা নাসরিনের পোস্টের পর তাঁদেরই অনেকে চলে আসেন লেখিকার ফেসবুক দেওয়ালে। কেন তিনি মেসিকে এমন বললেন! অবশ্য তসলিমার বক্তব্য, মেসির মতো খেলোয়াড়দের থেকে প্রত্যাশার পারদ সবসময়ই বেশি থাকে। তাই এমন পোস্ট।

অবশ্য এটাই প্রথম নয়। বিশ্বকাপের আগেও বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সরব ছিল তসলিমার ফেসবুক। ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা, মুক্তচিন্তার কণ্ঠরোধ নিয়ে তিনি বারবার সোচ্চার হয়েছেন। সেই পোস্টে অনেকে তাঁকে সমর্থনও করেছেন, অনেকে বিষও উগড়ে দিয়েছেন। এখনও তিনি অনেকের চক্ষুশূল। এমনকী, বিশ্বকাপের মঞ্চেও মরক্কোর ফুটবলার হাকিমির স্ত্রী হিবা আবুককে নিয়েও টুইটারে পোস্ট করেছিলেন তিনি। মুসলিম হলেও তিনি হিজাব পরেন না, সেই কথাটাই তুলে ধরেছিলেন। বিতর্ক শুরু হয় সেখানেও।

বিতর্ক শব্দটির সঙ্গে তসলিমা নাসরিন জড়িত বহুদিন ধরেই। উচিত হোক না অনুচিত, তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া সবসময়ই থাকে প্রাসঙ্গিক। বিশ্বকাপের মরসুমেও যে কোনও চেষ্টা ছাড়েননি তিনি, সেটাও স্পষ্ট। নিজের মতামত নিজের মতো করে ব্যক্ত করেছেন। আর সেটা নিয়েই সরগরম সোশ্যাল মিডিয়া। কয়েক ঘণ্টা পরই বিশ্বকাপ ফাইনাল। সেটা নিয়েও ইতিমধ্যেই তাঁর পোস্ট এসেছে। তসলিমা বলছেন, তিনি চান আর্জেন্টিনা জিতুক। কিন্তু তাঁর মন বলছে জিতবে ফ্রান্স। কোন দিকে যাবেন তিনি? মন্তব্যের ঢেউ শুরু হয়েছে সেখানেও।

More Articles