এক ম্যাচে ৪৪ টা পেনাল্টি! ফুটবলের ইতিহাসে কুখ্যাত হয়ে আছে যে ম্যাচ...

Football and Steroid Drugs: নিজের প্রকাশিত বইতে ১৯৮৭ শুমাখার বলছে, "আমাদের দলে নারীসঙ্গের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকলে কী হবে, দুনিয়ার ওষুধপত্র থাকত।"

একঘেয়ে রাশভারী রক্ষণশীলতা

ইংল্যান্ডের জাতীয় ফুটবল দলের কোচ ডন হাউ ১৯৮৭ সালে বলেছিল : "যেসব ফুটবলার ম্যাচ হারার পরও দিব্যি আত্মতৃপ্ত হয়ে ঘোরে তাদের দিয়ে কিস্যু হবার নয়।"

পেশাদার ফুটবল ক্রমশই আরও দ্রুতগামী এবং কুৎসিত হয়েছে। খেলাটা আজ এই জায়গায় দাঁড়িয়েছে তীব্র গতি আর শক্তিমত্ততার মিশেলে, তার পিছনে জ্বালানির কাজ করেছে হারের ভয়।

ইদানিং খেলোয়াড়রা মাঠে নেমে প্রচুর দৌড়য় কিন্তু ঝুঁকি নেয় কম, বলা ভালো ঝুঁকি নেয়ই না। ঔদ্ধত্য খুব একটা লাভজনক নয় কিনা! ১৯৫৪ থেকে ১৯৯৪- বিশ্বকাপের এই চল্লিশ বছরের ইতিহাসে মোট গোলের সংখ্যা কমতে কমতে আগের তুলনায় অর্ধেকে নেমেছে। জল এতদূর গড়িয়েছে যে ’৯৪-এর বিশ্বকাপে প্রতিটি জয়ের জন্য ফিফার তরফে বাড়তি পয়েন্টের তোহ্‌ফা কবুল করা হয়, যাতে অমীমাংসিতভাবে ম্যাচ শেষ করার প্রবণতা খানিক ঠেকানো যায়। ফুটবলের বাগানে এখন মাঝারিয়ানার চাষ চলছে। বেশিরভাগ দলেই হার আটকানোর জন্য মাঠের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষজ্ঞ খেলোয়াড় নামানো হয়, বরং এমন কোনও বিশেষজ্ঞ দেখতে পাওয়া দুষ্কর, যে হয়তো ভালো ফুটবলের বাসনায় খানিকটা ঝুঁকি নেবে, কিংবা খেলার সৃজনশীল আত্মার প্রতি সুবিচার করে হারের হাঁড়িকাঠের কথা মাথায় না-রেখে আক্রমণেও যাবে।

চিলের ফুটবলার কার্লোস কাস্তেলি এই লোভী ফুটবলকে ঠাট্টা করে বলেছিল, "আরে, এ তো বাদুড়দের কৌশল! এগারোটা মালই ক্রসবার ধরে ঝুলছে!"
রাশিয়ার নিকোলাই স্তারোস্তিন আজকের দূর-নিয়ন্ত্রিত ফুটবল নিয়ে নালিশ জানিয়ে বলেছে, "খেয়াল করে দেখবেন, আজকাল সব খেলোয়াড়কে একই রকম দেখতে লাগে। ওরা যদি জার্সি বদলে ফেলে, আপনি বুঝতেও পারবেন না কোনটা কে। সবার খেলাও একই রকম।"

রাশভারী রক্ষণশীলতায় প্রমিত ফুটবল খেলাটাই সব নাকি? সত্যিকারের রসিক যারা, তাদের কাছে খেলা মানে মজা করা; আর স্বাস্থ্য মানে শরীরটাকে যতটা খেলিয়ে মুক্ত রাখা যায়। নিয়ন্ত্রিত কেজো ক্ষমতার যান্ত্রিক পুনরাবৃত্তি স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর, আর তা ফুটবলের যা ক্ষতি করে, সে তো কহতব্য নয়।

কোনও রকম ভেলকি না দেখিয়ে, এতটুকু বিস্ময় না জাগিয়ে, সৌন্দর্যের সহজপাঠের প্রথমভাগটুকুও ভুলে গিয়ে ম্যাচ জেতা আর হারার মধ্যে কীই বা তফাৎ আছে বলুন? ১৯৯৪ সালে হিস্পানি দেশের ঘরোয়া লিগে হিহং স্পোর্টিং ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে দেয়। কিন্তু রিয়াল ছেলেরা সেদিন ভরপুর উৎসাহে খেলেছিল। উৎসাহ শব্দটির প্রকৃত অর্থ হলো ‘ঈশ্বরকে অন্তরে উপলব্ধি করা’। রিয়ালের কোচ হোর্খে ভালদানো খেলার শেষে ছেলেদের বলেছিল, "শেষ কবে এমন চমৎকার ফুটবল খেলেছ তোমরা? এরকম খেলে হারলেও লজ্জা নেই।"

আরও পড়ুন- ৬ গোল হজমের শাস্তি! ভক্তদের পাথরবৃষ্টিতে ছারখার হয়ে গিয়েছিল ফুটবলাররা…

ওষুধের পাইকারি দোকান

১৯৫৪-র বিশ্বকাপ ফাইনালে জার্মানি প্রবল গতিতে আছড়ে পড়েছিল হাঙ্গেরির রক্ষণের উপর। যদি বলি, হাঙ্গেরিকে তারা একেবারে নর্দমার মাঝখানে বসিয়ে ছাড়ে, তাহলেও খুব একটা ভুল হবে না। কিন্তু সেসময়েই হাঙ্গেরির ফেরেন্স পুশকাশ বলেছিল, সে না কি জার্মানির সাজঘরে আফিমের বাগানের মতো গন্ধ পেয়েছে। তার দাবি ছিল সেবারের বিশ্বজয়ীদের মেল ট্রেনের মতো গতির সঙ্গে ওই গন্ধটার একটা সম্পর্ক থাকা অস্বাভাবিক নয়।

জার্মানির জাতীয় দলের গোলকিপার হারল্ড ‘টোনি’ শুমাখারের একখানা বই প্রকাশিত হয়েছে ১৯৮৭ সালে, সেখানে শুমাখার বলছে, "আমাদের দলে নারীসঙ্গের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকলে কী হবে, দুনিয়ার ওষুধপত্র থাকত।" বুঝতেই পারছেন, শুমাখার জার্মানদের জাতীয় দল এবং সেই সূত্রে পেশাদার ফুটবলের কঠোর জগৎ নিয়েই কথা বলার চেষ্টা করেছে। শুরুর বাঁশি বইটাতে সে ১৯৮৬-র বিশ্বকাপের দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করেছে। সেবারের জার্মান দলের খেলোয়াড়দের নাকি দিনের পর দিন প্রচুর ইঞ্জেকশন, ওষুধ দেওয়া হতো। আর একটা রহস্যময় খনিজ-সমৃদ্ধ জল খাওয়ানো হতো, যেটা খেয়ে অনেক ফুটবলারের ডায়ারিয়া পর্যন্ত হয়ে যায়। আচ্ছা, বলুন তো এটা একটা দেশের জাতীয় দল, না কি জার্মানির রাসায়নিক শিল্প! খেলোয়াড়দের আবার ঘুমের বড়িও গেলানো হতো। শুমাখার লিখেছে সে নাকি থু-থু করে ঘুমের বড়ি ফেলে দিয়ে ঘুমের জন্য নিজের বহুকালের বিশ্বস্ত সঙ্গী বিয়রের ক্যানের উপরেই নির্ভর করত।

শুমাখারের বয়ান অনুযায়ী খেলাধুলার পেশাদার জগতে অ্যানাবলিক স্টেরয়েড আর সক্ষমতা বাড়ানোর ওষুধের ব্যবহার আজকাল জলভাত। খেলতে নামলেই জেতার নিরন্তর চাপের দুনিয়ায় যেনতেন প্রকারে ক্রমাগত জিততেই হয়। ফলে যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা উদ্বিগ্ন খেলোয়াড়দের অনেকেই হয়ে ওঠে পাইকারি ওষুধের দোকানের মালিক। মুশকিল হলো, যে অনৈতিক সমাজব্যবস্থা তাদের এইসব ড্রাগের মুখে ঠেলে দেয়, ধরা পড়ে গেলে সেই একই সমাজ তাদের ঘৃণ্য বলে দেগে দেয়।

শুমাখারের কথাই ধরুন, ও মাঝেমাঝে নিষিদ্ধ ওষুধ নেওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছে, ফলত দেশবাসীর কাছে সে আজ বিশ্বাসঘাতক। শুমাখার তো এলেবেলে খেলোয়াড় নয়, দু' দুটো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ওঠা দলের গোলকিপার, তার সামাজিক মর্যাদাই আলাদারকমের ছিল। কিন্তু তাকে একধাক্কায় সম্মানের আসন থেকে হিঁচড়ে টেনে কাদায় ফেলে দেওয়া হয়েছে। জাতীয় দল তো বটেই কোলনের দল থেকেও লাথি মেরে তাড়ানো হয়েছে। তুরস্কের একটা ক্লাবে চলে যাওয়া ছাড়া বেচারার অন্য কোনও রাস্তা ছিল না।

আরও পড়ুন- ছিলেন কাপড় কারখানার মজুর! যেভাবে বিশ্বফুটবলের কিংবদন্তি হয়ে উঠলেন গার্ড মুলার…

ঘৃণার পদাবলি

মানচিত্রে পাবেন না, কিন্তু আছে। তাকে সাদা চোখে দেখা যাবে না, কিন্তু আছে। এমন সারি সারি বাধার পাঁচিল, যা বার্লিন প্রাচীরের স্মৃতিকেও ঠাট্টা-ইয়ার্কির পর্যায়ে নামিয়ে আনে। যাদের অনেক আছে আর যাদের একেবারেই নেই তাদের মধ্যে বিভাজন রেখা হয়ে উঁচিয়ে থাকে এই পাঁচিলের পাহারা। পৃথিবীকে উত্তর দক্ষিণে বাঁটোয়ারা করে, একই দেশ বা শহরের মধ্যেও বিভাজনের অক্ষ-দ্রাঘিমা রেখা টানে। দক্ষিণ দুনিয়ার যে কাজ করা পাপ, যখনই তারা সেই কাজ করে, চড়ে বসে দেওয়ালের মাথায়, উত্তর নিজের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে লাঠি উঁচিয়ে দক্ষিণকে ধমকায়। তার বংশপরিচয় মনে করিয়ে দেয়। একই ঘটনা ঘটে যখন কোনও অবজ্ঞাত নিজের চিরাচরিত জায়গা ছেড়ে একটু আলো-হাওয়ার দিকে মুখ করে বাঁচতে যায়। এটা পৃথিবীর সব দেশের, সব শহরের ঘর-ঘর কা কাহানি।

ফুটবলের জগৎ এক আশ্চর্য আরশিনগর, বাস্তবের হুবহু প্রতিফলন তার দেওয়ালে-দেওয়ালে। গত শতকের আশির দশকের মাঝামাঝি মারাদোনার জাদুতে যখন নাপোলি ইতালির ফুটবলে সেরা হয়ে উঠল, তখন ইতালির উত্তরাঞ্চলের সমর্থকেরা ঘৃণার আদিম অস্ত্রে ফের শান দিল। নাপোলির মানুষ যখন এতকালের নিষিদ্ধ গৌরব অর্জন করতে শুরু করল, একের পর এক ট্রফি জিততে শুরু করল, তখন তাদের বুঝিয়ে দেওয়াও শুরু হলো যে তারা নেহাতই নীচবংশজাত অনুপ্রবেশকারী, অকুলীন। মিলান, তুরিনের স্টেডিয়ামগুলোয় অসম্মানজনক ব্যানার ঝুলিয়ে লেখা হল : ‘নাপোলিবাসীকে ইতালিতে স্বাগত জানাই’। আরও নিষ্ঠুরভাবে লেখা হলো : ‘ভিসুভিয়ো [ভিসুভিয়াস] আমরা কিন্তু সব হিসেব রাখছি’। 

ঘৃণার পদাবলি, যা বস্তুত ভীতির সন্তান আর বর্ণবিদ্বেষের নাতি-পুতি, গোটা দেশের স্টেডিয়ামগুলোর গ্যালারিতে গ্যালারিতে তার দোহারকি চলল বাড়তি উদ্যমে :        

বাপরে কী দুর্গন্ধ!

কুত্তাগুলো দৌড়চ্ছে দেখ,

নাপোলি আসছে, নাপোলি আসছে,

আহাম্মক হতচ্ছাড়া দজ্জালের দল, 

এতকাল কবরে শুয়েছিল রিখটারের দাপে।

শুয়োরগুলো জীবনে সাবান মাখেনি, কেক খায়নি বাপের জন্মে

নোংরা নাপোলি, বিসূচিকার আঁতুড়ঘর,

ইতালির লজ্জা।

আরহেন্তিনাতে একই ঘটনা ঘটে বোকা জুনিয়র্সের ক্ষেত্রে। বোকার সমর্থকের মাথায় গজালের মতো খাড়া চুল, তারা কালো আর বাদামি চামড়ার মানুষ। দেশের দূরদূরান্তের গ্রাম-মফস্‌সল থেকে আসা গরিবগুর্বো, নয়তো আশপাশের দেশ থেকে আসা লোকেরা বোকার নাম মুখে নিয়ে ঈশ্বরের বাসভূমি বুয়েনস আইরেসে হানা দিয়েছে। শত্রুপক্ষ তাই এই ভয়ংকর ভূত তাড়াতে ঝাড়ফুঁক শুরু করেছিল :   

বোকার দুঃখের শেষ নেই, 

জানি জানি সবটা জানি।

কালোকেলো সমকামী যত

মার হারামজাদাগুলোকে

কত সাধ ফুটবল খেলার

কালোকেলো সমকামী যত।

গাঁইয়া ভাঁড়গুলোর পেছনে লাথি মেরে 

ছুঁড়ে ফেল রিভার প্লেটের জলে।   

আরও পড়ুন- ফুটবলার না হোর্ডিং! জুতোর ফিতে বাঁধার নামে আসলে ব্র্যান্ড দেখাতেই চান খেলোয়াড়রা?

সব কুছ চলতা হ্যায়

মেহিকোর সাংবাদিক মিগেল অ্যাঙ্খেল রামিরেজ় ১৯৮৮ সালে সেদেশের ফুটবলে নবযৌবনের ফোয়ারার উৎসমুখ খুঁজে বের করল। সেবার মেহিকোর জুনিয়র দলে বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় বয়সের ঊর্ধ্বসীমা থেকে দুই-তিন এমনকী ছ' বছরের ছোট ছিল। বোধহয় কোনও মন্ত্রপূত জলে তাদের স্নান করানো হয়েছিল! বস্তুত, কর্তারা তাদের জন্মের প্রমাণপত্র জাল করেছিল এবং সেই জাল কাগজ দিয়ে বানিয়ে নিয়েছিল তাদের পাসপোর্ট। গোটা কাজটা এমন দক্ষ ও নিপুণ হাতে সামলানো হয়েছিল যে একজন ফুটবলার তার যমজ ভাইয়ের থেকে দু' বছরের ছোট হয়ে গিয়েছিল।

শেষে ওদেশের ফুটবল ক্লাব গুয়াদালাহারার সহ সভাপতি বিবৃতি দিয়ে জানায় : "বয়স ভাঁড়ানোর ব্যাপারটাকে আমি খুব একটা ভালো অভ্যেস বলব না, তবে বহুদিন থেকেই এমনটা চলে আসছে।"

অন্যদিকে মেহিকোর জুনিয়র ফুটবলের সর্বেসর্বা রাফায়েল দেল কস্তিলো প্রশ্নবাণ ছুঁড়ে দেয় : "অন্য দেশগুলো যখন অবলীলায় এই কাজ করে তখন মেহিকোই বা কৌশলী হবে না কেন?"

১৯৬৬-র বিশ্বকাপের কিছুদিনের মধ্যেই আরহেন্তিনার ফুটবল ফেডারেশনের নিয়ন্ত্রক ভ্যালেন্তিন সুয়ারেজ় মন্তব্য করে, "স্ট্যানলি রাউস লোকটা সুবিধের নয়। সন্দেহজনক। এমনভাবে বিশ্বকাপটা নিয়ন্ত্রণ করল যাতে ইংল্যান্ড জেতে। অবিশ্যি আমাদের দেশে খেলা হলে আমিও ওরকমই করতাম।"

খোলাবাজারের নীতিই আমাদের সময়ে দুনিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় নীতি হয়ে দাঁড়াল। নতুন যুগের এই মূল্যবোধ যতক্ষণ সাফল্যের মুখ দেখে ততক্ষণ সব কিছুই মেনে নিয়ে সবুজ সংকেত দেখায়। ভেবেও দেখে না ওগুলো সিঁধকাঠি হয়ে তার নিজেরই ঘরের দেওয়াল কাটবে কিনা। পেশাদার ফুটবলে অত দ্বিধা-টিধা নেই, আর থাকবেই বা কেন! সে তো ক্ষমতা নামক নির্লজ্জ এক গঠনতন্ত্রের অংশ। এই ক্ষমতা বাজার থেকে যে কোনও মূল্যে বেছে বেছে কেজো এবং ফলদায়ী জিনিস কেনে। যাইহোক না কেন, দ্বিধার অত দাম নেই বাজারে। দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, নীতি-নৈতিকতা চতুর্দশ শতাব্দীর নবজাগ্রত ইতালি থেকেই বদলাতে শুরু করেছে। আজ পাঁচ শতাব্দী পরে জার্মানির কোলন ক্লাবের ফুটবলার পল স্টেইনার নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছিল, "আমি বাবা পয়সা পাওয়ার জন্যই খেলি! আর হ্যাঁ, লিগে পয়েন্ট পাওয়ার জন্যও। মনে মনে ভাবি বিপক্ষের খেলোয়াড়রা আমার কাছ থেকে টাকা আর পয়েন্ট ছিনিয়ে নেবে। তাই আমি তার সঙ্গে সর্বস্ব পণ করে লড়ে যাই, আমার যত জোর আছে শরীরে সবটা কাজে লাগাই।"

ওলন্দাজদের জাতীয় দলের খেলোয়াড় ঘিহাস ১৯৮৮ সালে ফরাসি ফুটবলার তিগানার পেট লক্ষ্য করে তীব্র শট মেরে তাকে ঘায়েল করেছিল। এই ঘটনার সাফাই দিতে গিয়ে জাতীয় দলে ঘিহাসের সতীর্থ রোনাল্ড কুমান বলেছিল, "ঘিহাস একেবারে ঠিক কাজ করেছে। অত আবেগ-টাবেগ দেখালে চলবে না ভাই। তিগানা আমাদের বিপক্ষের সেরা খেলোয়াড়, তাকে যেকোনও প্রকারে ঠান্ডা করাটাই দরকার ছিল।"

সর্বত্রই ‘ফলেন পরিচয়তে’ অবস্থা, যত পাশবিক কাজই হোক, ফল অনুকূল হলে তার সাতখুন মাফ। যদিও গোলমেলে ব্যাপারগুলো ধূর্ততার সঙ্গে মিটিয়ে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। অলিম্পিক দে মার্সেইয়ের রক্ষণভাগের খেলোয়াড় বাসিলে বোলি সবসময় বিপক্ষের ফুটবলারের গোড়ালি লক্ষ্য করে পা চালাত। এমন নিষ্ঠুর ফুটবল কোথায় শিখল জিগ্যেস করায় সে বলেছিল, ১৯৮৮-তে রজার মিল্লা নাকি একটা ম্যাচে তাকে ক্রমাগত কনুই মারছিল। শেষে বিরক্ত হয়ে সে রজার মিল্লাকে মাথা দিয়ে ঢুঁসো মেরে ফেলে দেয়। "সেদিনই আমার প্রকৃত ফুটবলে হাতেখড়ি হয়, তোমাকে মারার আগেই তুমি মারো, আর যখন মারবে একবারে চিরদিনের জন্য বুঝিয়ে দাও তুমি কী জিনিস।"

কিন্তু আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে, মাঠে যাই করুন, বল থেকে দূরে করতে হবে। টিভি ক্যামেরার মতো রেফারিও সবসময় বলের দিকে চোখ রাখে। সত্তরের বিশ্বকাপের কথা ভাবুন, সেবার পেলেকে ইতালির বেরতিনি কী মারাত্মকভাবে আটকেছিল! পেলে অনেক পরে বেরতিনির প্রশংসা করে বলেছিল, "ফাউল করার ব্যাপারে ও ছিল ওস্তাদ। কেউ দেখতেই পেত না কখন মেরে যাচ্ছে। আমার পাঁজরায় ঘুষি চালিয়েছে, পেটে মেরেছে, গোড়ালি লক্ষ্য করে লাথি চালিয়েছে… এব্যাপারে বেরতিনি পুরোদস্তুর শিল্পী ছিল!"

আরহেন্তিনার লোকেরা কার্লোস বিলার্দোর খুব তারিফ করে। ওই লোকটা জানত চোরাগোপ্তা মারপিট কীভাবে সামলাতে হয়। লোকে বলে বিলার্দো যখন খেলোয়াড় ছিল, তখন সে অম্লানবদনে বিপক্ষের খেলোয়াড়ের গায়ে ছুঁচ ফুটিয়ে দিয়ে সাধু সেজে মাঠে ঘুরত। পরে সেই বিলার্দোই জাতীয় দলের কোচ হলো, অভ্যেস কিন্তু তখনও পালটায়নি। ১৯৯০-এর বিশ্বকাপে আরহেন্তিনার সবচেয়ে কঠিন ম্যাচ ছিল ব্রাজ়িলের বিরুদ্ধে। সেদিন সে ম্যাচের মধ্যেই ব্রাজ়িলের তৃষ্ণার্ত ফুটবলার ব্র্যাঙ্কোর হাতে এমন এক বোতল জল পাঠিয়ে দিয়েছিল যেটা খাওয়ার পরই তার বমি শুরু হয়ে যায়।

উরুগুয়ের সাংবাদিকেরা অবিশ্যি খেলার মাঠে খুল্লামখুল্লা অপরাধকে প্রশংসার ছলেই বলে ‘শক্ত পায়ের খেলা’। এমনকী আন্তর্জাতিক ফুটবলের কথা মাথায় রেখে, প্রতিপক্ষকে ভয় দেখাতে তাদের একটু ‘মালিশ’ করে দেওয়া উচিত বলেই তারা মনে করে! তারা এটাও বিশ্বাস করে, প্রতিপক্ষকে ‘দলাই-মলাই’ করে দিতে হবে একেবারে খেলার শুরুতেই। বেশি দেরি করলে রেফারি লাল কার্ড বের করে বসিয়ে দিতে পারে। উরুগুয়ের ফুটবলে যত অবক্ষয় হয়েছে তত মারপিট বেড়েছে। অনেককাল আগে ‘চারুয়ার থাবা’ কথাটা এদেশে বীরত্বব্যঞ্জক ছিল। চারুয়া আমদের দেশের আদিম অবলুপ্ত জনজাতি। কিন্তু লাথি মারাটা আর যাইহোক বীরত্বের কাজ নয়। মারাকানায় ১৯৫০-এর বিশ্বকাপ ফাইনালের দিন ব্রাজ়িল উরুগুয়ের দ্বিগুণ ফাউল করে। ১৯৯০-এর বিশ্বকাপে উরুগুয়ের কোচ অস্কার তাবারেজ় দলকে আবার পরিচ্ছন্ন ফুটবলে ফিরিয়ে এনেছিল। স্থানীয় ধারাভাষ্যকারেরা এতে খুব একটা প্রসন্ন হয়নি, তাদের মতে সেবারের কাপে জাতীয় দল কিস্যু করে দেখাতে পারেনি। কিন্তু উরুগুয়ের এমন অনেক সমর্থক এবং ফুটবল কর্তা আছে যারা যেনতেন প্রকারে জেতার চাইতে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয় সম্মানজনক হারকে।

উরুগুয়ের আক্রমণভাগের খেলোয়াড় ‘পেপে’ সাসিয়া বলেছিল, "আর কী করব, গোলকিপারের চোখে ময়লা ফেলে দেব? ম্যানেজাররা ওসব পছন্দ করে না।"

আরেহেন্তিনার ভক্তরা ১৯৮৬-তে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের ম্যাচে মারাদোনার হাত দিয়ে করা গোলটাকেও প্রশংসায় ভরিয়ে দেয়, ওদের সাফ যুক্তি রেফারি দেখতে পায়নি। ’৯০-এর বিশ্বকাপের যোগ্যতা নির্ধারণকারী ম্যাচে চিলের গোলকিপার রোবের্তো রোহাস কপালে একটা কাটা দাগ দেখিয়ে রেফারির কাছে প্রমাণ করার চেষ্টা করছিল তাকে মারা হয়েছে। কিন্তু রেফারি তার কথায় আমল তো দেয়ইনি, উলটে সবাই ধরে ফেলেছিল তার ফন্দি। ভক্তরা এতকাল তাকে আদর করে ‘শকুন’ বলে ডাকত, তারাই হঠাৎ তাকে খলনায়ক বানিয়ে দিল। কারণটা খুবই সহজ এবং সাদা, ওর ফন্দিটা ধরা পড়ে গেছে। পেশাদার ফুটবলে আর-পাঁচটা ক্ষেত্রের মতোই অপরাধ তত গুরুতর হয় না যতক্ষণ অজুহাতটা লাগসই মনে হয়। ‘সংস্কৃতি’ মানে তো সভ্যতা। ক্ষমতার সংস্কৃতি আমাদের কোথায় পৌঁছে দেবে? ক্ষমতার এমন বহিঃপ্রকাশ মিলিটারি শাসক কিংবা ঘুষখোর রাজনীতিবিদকে ছাড় দেয় না, কিন্তু ফুটবলে এটাই প্রশংসনীয় কৃতিত্ব বলে ধরা হয় আজকাল।

লেখক আলব্যের কামু, যিনি আবার আলজিরিয়ায় গোলকিপারও ছিলেন, তিনি নিশ্চয়ই এই পেশাদার ‘ফুটবলের কাছ থেকে নৈতিকতার পাঠ’ নেননি।

আরও পড়ুন- মহিলাদের যাতে অসম্মান না হয়, তাই সর্বাঙ্গ ঢাকা জামা পরে মাঠে নামতেন ফুটবলাররা!

বদহজম

১৯৮৯-এর কথা বলছি। বুয়েনস আইরেসে আরহেন্তিনোস জুনিয়র্সের সঙ্গে রেসিংয়ের খেলা অমীমাংসিতভাবে শেষ হলো। নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের পর পেনাল্টিতে ফলাফল নির্ণয় করা হবে।

পেনল্টির গন্ধ পেয়েই গ্যালারিতে সবাই তখন দাঁড়িয়ে পড়েছে, উত্তেজনায় দাঁতে নখ কাটছে কেউ। সবাই বারো গজ দূর থেকে গোলে শট নেওয়া দেখতে উদগ্রীব। প্রথম শটে রেসিং গোল পেল এবং সমর্থকরা আনন্দে ফেটে পড়ল। তারপরই আরহেন্তিনোস জুনিয়র্স গোল করল এবং তার সমর্থকেরা উল্লসিত হয়ে পড়ল। রেসিংয়ের গোলকিপার একদিকে ঝাঁপিয়ে হাত মুঠো করে আলতো ঘুষি মেরে একটা গোল বাঁচাতে সবাই ধন্য ধন্য করল। আবার আরহেন্তিনোস জুনিয়র্সের গোলকিপার যখন পেনাল্টি নিতে আসা খেলোয়াড়ের ফাঁদে পা না দিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নিজের জায়গায় খাড়া থেকে ঠিক বারপোস্টের মাঝখানে নেওয়া শটটা অবলীলায়া বাঁচিয়ে দিল তখনও সবাই ধন্য ধন্য করল। দু' দলের মোট দশটা শট নেওয়া হয়ে যেতে দর্শকরা প্রথামাফিক একদফা হাততালি দিল। দু' দলেরই কিছু কিছু সমর্থক কুড়িটা শটেও খেলার মীমাংসা না হওয়ায় স্টেডিয়াম ছেড়ে বেরিয়ে গেল। তিরিশতম পেনাল্টিটা নেওয়ার পর যে ক'জন লোক মাঠে অবশিষ্ট ছিল তারা হাই তুলতে তুলতে হাততালি দিল। পেনাল্টির পর পেনাল্টি নেওয়া চলল, তবু ম্যাচ অমীমাংসিত থেকেই গেল।
চুয়াল্লিশতম পেনাল্টি শটটা নেওয়ার পর খেলা শেষ হয়। ওই ম্যাচে পেনাল্টির বিশ্বরেকর্ড হলো। কিন্তু ততক্ষণে স্টেডিয়ামে আর কোনও দর্শক নেই, কেউ পরে জানারও চেষ্টা করেনি সেদিন কোন দল জিতেছিল।

১৯৯০-এর বিশ্বকাপ

দক্ষিণ আফ্রিকায় নিজের কৃষ্ণাঙ্গ-সত্তায় গর্ব অনুভব করা নেলসন ম্যন্ডেলা নাগাড়ে সাতাশ বছর জেল খেটে সবে মুক্তি পেলেন। কলম্বিয়ায় রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী বামপন্থী নেতা বেরনার্দো হারামিজো অজ্ঞাত পরিচয় আততায়ীর গুলিতে খুন হলেন। ড্রাগ চোরাচালানের চাঁই, দুনিয়ার প্রথম দশজন ধনীর তালিকাভুক্ত রদ্রিগেজ় গাচাকে পুলিশ হেলিকপ্টার থেকে মেশিনগান তাক করে মারল। চিলের ক্ষতবিক্ষত গণতন্ত্রের সার্বিক স্বাস্থ্যের হাল ফিরছিল। কিন্তু সামরিক প্রধান জেনারেল পিনোশে গোটা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছিল এবং সব রাজনৈতিক নেতার মুখে লাগাম পরিয়ে রাখার ব্যবস্থা করেছিল। পেরুর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ফুজিমোরি ট্রাক্টরে চড়ে ভার্গাস ইয়োসাকে হারিয়ে দিল। নিকারাগুয়ায় সান্দিনিস্তারা নির্বাচনে হেরে গেল, তারা কার্যত হারল দীর্ঘ দশ বছর ধরে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ের অবসাদে। এই হানাদাররা মার্কিনি অস্ত্র প্রশিক্ষণে লায়েক হয়ে উঠেছিল। ওদিকে মার্কিন বাহিনী একুশবারের চেষ্টায় পানামাকে হারাতে পেরে সেদেশে নতুন উপনিবেশ বানানোর কাজ শুরু করল। পোল্যান্ডের জননেতা লেখ ওয়ালেসা (লেচ ওয়ালেসা) জেল থেকে বেরিয়ে সরকারে ঢুকলেন। মস্কোর জনতা ম্যাকডোনাল্ড’সের দোকানের বাইরে লম্বা লাইনে দিল। দুই জার্মানির মিলন সম্ভব হলো, স্মারক হিসেবে বার্লিন প্রাচীরের ধ্বংসাবশেষ বিক্রি হতে থাকল। য়ুগোশ্লাভিয়াকেও টুকরো করা শুরু হলো। রোমানিয়ার গণ-অভ্যুত্থানে চাউসেস্কু [চেসেস্কু] জমানা শেষ হলো। বুড়ো স্বৈরশাসক, যে নিজেকে ‘সমাজতন্ত্রের নীল দানিয়ুব’ বলতেই পছন্দ করত, বিচারে তার ফাঁসি হলো। গোটা পূর্ব ইওরোপ জুড়েই বুড়ো আমলারা নতুন উদ্যোগপতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে লাগল। আর পূর্ব ইওরোপের দেশে দেশে কার্ল মার্ক্সের মূর্তিগুলোকে বেদি ভেঙে ক্রেন দিয়ে সরানোর কাজ শুরু হল। বেচারা মার্ক্স, ‘আমি নিরপরাধ’ বলার মতো অবস্থাতেও ছিলেন না। মিয়ামির সর্বজ্ঞ মাতব্বররা বলে বেড়াচ্ছিল খুব শিগগিরই না কি ফিদেল কাস্ত্রোর পতন অনিবার্য। আর সেরেফ কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা শুধু! ওদিকে মহাকাশে শুক্রগ্রহের চারপাশে পার্থিব যন্ত্রপাতি ঘুরে ঘুরে তার যাবতীয় রহস্যের ছানবিন শুরু করল। এদিকে ইতালিতে চতুর্দশ ফুটবল বিশ্বকাপের আসর বসল।

আরও পড়ুন- এক হাতে রিভলবার, অন্য হাতে চিঠি! মাঝমাঠেই নিজেকে শেষ করে দিয়েছিলেন ফুটবলার

১৯৯০-এর বিশ্বকাপে চোদ্দোটা ইওরোপের দল এবং ছ'টা আমেরিকার দল অংশগ্রহণ করল, সঙ্গে রইল মিশর, দক্ষিণ কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি আর ক্যামেরুন। ক্যামেরুন প্রথম ম্যাচে আরহেন্তিনাকে হারাল এবং তারপর ইংল্যান্ডের সঙ্গে সমানে সমানে খেলে তাক লাগিয়ে দিল। ক্যামেরুনের বর্ষীয়ান ফুটবলার চল্লিশ বছরের মিল্লা সে ইবিশ্বকাপে আফ্রিকার অর্কেস্ট্রার সামনের সারির বাজনদার ছিল।

কুমড়োর মতো ফুলে থাকা এক পা নিয়ে মারাদোনা নিজের দলের জন্য যতটা সম্ভব করল। যদিও তার খেলায় পুরনো ঝলক, আগেকার সেই ট্যাঙ্গোর লেশমাত্র দেখা গেল না। ক্যামেরুনের কাছে হারার পর, আরহেন্তিনা রোমানিয়া আর ইতালির সঙ্গে অমীমাংসিত ম্যাচ খেলল এবং ব্রাজ়িলের সঙ্গে হারতে হারতে বাঁচল।* সেদিন গোটা ম্যাচ জুড়ে ব্রাজ়িলেরই প্রাধান্য ছিল, যতক্ষণ না একপায়ে খেলা মারাদোনা মাঝমাঠে তিনজনকে কাটিয়ে কানিহিয়ার [ক্যানিজিয়া] জন্য বল তৈরি করল। কানিহিয়াও চোখের পলক ফেলার আগে বল নিয়ে গোলে ভরে দিল।

গত বিশ্বকাপের মতো এবারেও ফাইনালে আরহেন্তিনা জার্মানির মুখোমুখি হলো। কিন্তু এবার জার্মানি অদৃশ্য এক ফাউল আর বেকেনবাওয়ারের বুদ্ধিদীপ্ত প্রশিক্ষণের দৌলতে ১-০ গোলে ম্যাচ জিতে বেরিয়ে গেল।

ইতালি তৃতীয় স্থান পেল, ইংল্যান্ড চতুর্থ। ইতালির স্কিলাচি ছ'টা গোল করে তালিকার শীর্ষে থাকল, তারপরেই পাঁচ গোল করেছিল চেকোশ্লোভাকিয়ার স্কুরাভি। ১৯৯০-এর বিশ্বকাপ মনে থাকবে একঘেয়ে বিরক্তিকর ফুটবলের জন্য। ফুটবলে ঔদ্ধত্য বা সৌন্দর্যের ছিটেফোঁটাও ছিল না। ম্যাচ প্রতি গড় গোলের সংখ্যা এই বিশ্বকাপে ছিল সর্বনিম্ন।

* ১৯৯০ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্যায়ে নয়, ইতালির বিরুদ্ধে আরহেন্তিনা খেলেছিল সেমিফাইনালে। সেদিন নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলে অমীমাংসিত থাকার পর আরহেন্তিনা টাইব্রেকারে ম্যাচ জিতে যায়। অনু.

More Articles